HomeAllYomrajer Bonnya: যমরাজের বন্যা

Yomrajer Bonnya: যমরাজের বন্যা

মানুষ খাবার, জল আর সাহায্যের জন্য ছটফট করতে থাকে।

স্পেনের আকাশ ছিল সেদিন ভর দুপুরের পর থেকেই অন্ধকারে ঢাকা। বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ, যেন মহাবিপর্যয়ের পূর্বাভাস। দুপুরে প্রথম বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মাটিতে আঘাত হানতে শুরু করে। মুহূর্তেই কাদা মিশে যায় জলে, ছোট ছোট গিরিখাতগুলো কানায় কানায় ভরে ওঠে। তবে তখনো কেউ জানত না, কেমন এক ভয়ংকর পরিণতি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

রাতের বেলা বৃষ্টি বাড়ল আর সঙ্গে বাড়তে থাকল শিহরণ। দক্ষিণ ও পূর্ব স্পেনজুড়ে শোনা যেতে লাগল জলের গর্জন। মালাগা থেকে ভ্যালেন্সিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের মানুষ তখনো জানত না কী ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নামছে তাদের উপর। সকালে যখন লোকজন জেগে উঠল, তখন চারপাশটা যেন এক ভিন্ন জগৎ। সবখানে থৈ থৈ জল আর কর্দমাক্ত স্রোতের বেগে রাস্তাঘাট যেন নদীতে রূপ নিয়েছে।

গাড়ি, ট্রাক, বাইক—সব একে একে স্রোতের সামনে অসহায়ের মতো ভেসে যেতে লাগল। কোনো কোনো যানবাহন রাস্তায় পড়ে থাকলেও তা যেন কাদা আর জলেতে ঢেকে একটা বর্জ্যপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। বন্যার জল চারদিকে এমনভাবে ছড়িয়ে গেছে যে, কিছুই আর আগের মতো চেনা যাচ্ছে না। গ্রামের বাড়িগুলো, এক সময় শান্ত আর স্থিতিশীল, এখন জলের প্রচণ্ড স্রোতের আঘাতে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ঘরের আসবাবপত্র, দরজা-জানালা সবকিছু জলের তীব্র গর্জনে ভেসে যাচ্ছে।

ততক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীরা তৎপর হয়ে ওঠে। তবে তাদের কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। রাস্তাঘাটে ভেসে থাকা ধ্বংসাবশেষ আর বাড়ির ভেতরে আটকাপড়া লোকজনকে নিরাপদে বের করে আনা এক ভয়ংকর চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়। প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে তারা রাবারের নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, বন্যার স্রোতকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে।

একটি বাড়ির ছাদে আটকে পড়েছিল এক বৃদ্ধা। তার আশেপাশের মানুষজন সবাই কোনো না কোনোভাবে সরে গেছে, কিন্তু তার জন্য কেউ কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। সেই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করতে হেলিকপ্টারের প্রয়োজন পড়ে। উপায়ান্তর না দেখে হেলিকপ্টারের সাহায্যে তাকে তুলে আনা হয়। আতঙ্কিত বৃদ্ধা তখনো জড়োসড়ো হয়ে নিজের মেয়েকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। জলের নিচে তখন ঘরের আসবাব, তার জমানো স্মৃতি, সব কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে।

এরই মধ্যে গাড়ির ছাদে আটকে পড়া বেশ কিছু চালককে দেখতে পায় উদ্ধারকারীরা। স্রোতের তীব্রতা এমন ছিল যে, স্রোতে গাড়ি ভেসে যেতেই পারত। তবে তারা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন, আশার কোনো রশ্মি খুঁজছিলেন। রাবারের নৌকায় উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছায়। কিছুক্ষণ পরেই তাদের কাঁপতে কাঁপতে, হতবিহ্বল অবস্থায় নিরাপদে নিয়ে আসা হয়।

জলের বেগ যেন কিছুতেই থামছে না। একদিকে বৃষ্টির বেগ, অন্যদিকে জলের প্রবল গতি, সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে পুরো গ্রামটাই জলের স্রোতের সঙ্গে ধ্বংসস্তূপের মতো ভাসছে। জলের নিচে ডুবে থাকা রাস্তার দিকে তাকালে বোঝাই যায় না, এক সময় এখানে জীবন চলত।

মাঝে মাঝে কোনো পলকা কাঠের বাক্স ভেসে ওঠে, কোনো কোনো বাসার ছাদের উপর থাকা ফ্রিজ, টেলিভিশন এমনকি চেয়ারগুলোও জলেতে ঘুরপাক খায়। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলো হতবাক হয়ে চারপাশের দৃশ্য দেখছে, যেন কোন দুঃস্বপ্নে আছে তারা। কারও চোখে বিস্ময়, কারও মুখে কান্না।

বুধবার দুপুর নাগাদ বৃষ্টিপাতের বেগ একটু কমলেও, বন্যার প্রকোপ ততক্ষণে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। স্পেনজুড়ে মৃত্যুর খবর আসতে শুরু করেছে। জানা গেল, এই বন্যায় অন্তত ৯৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

কিছু গ্রাম এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যে, সেখান থেকে সাহায্যের আহ্বান পৌছায় অনেক দেরিতে। সেখানকার মানুষ খাবার, জল আর সাহায্যের জন্য ছটফট করতে থাকে।

উদ্ধারকর্মীদের মতে, এটা এমন এক বিপর্যয় যা বহুদিন মনে রাখবে মানুষ। পুরো গ্রামগুলোর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেন আর কখনো আগের মতো ফিরে আসবে না।

|| সমাপ্ত ||

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন