গভীর রাত। চরভদ্র সীমান্ত এলাকা ঢেকে আছে ঘন কুয়াশায়। চারদিকে পিনপতন নিস্তব্ধতা। হঠাৎই অন্ধকারে একটি কালো ছায়া ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে সীমান্তের দিকে। বিএসএফের জওয়ান অরিন্দম মিত্র তাঁর পোস্টে নজর রাখছিলেন। লুকোচুরির খেলা তাঁর কাছে নতুন নয়। প্রতিদিনই কেউ না কেউ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু আজকের ছায়াটি যেন একটু বেশিই সন্দেহজনক।
অরিন্দম বাইনোকুলার তুলে ধরলেন। সাদা লুঙ্গি, মাথায় গামছা, কাঁধে ব্যাগ। হালকা ল্যাজকাটা চলন। ছায়াটি যেন দ্রুত গাছের আড়াল ধরে এগিয়ে আসছে। অরিন্দম কানে ওয়ারলেস টেনে নিলেন, “ডেল্টা টু, আমরা লক্ষ্য করেছি একটি চলমান ছায়া। অপারেশন শুরু করব?”
ওপাশ থেকে নির্দেশ এলো, “অ্যালার্ট থাকো। ছায়াটি সীমান্ত ক্রস করলেই অ্যাকশন নাও।”
ছায়াটি সীমান্তের কাছাকাছি এলে, চারদিকের নিস্তব্ধতা ভেঙে উঠে দাঁড়ালো বিএসএফের টিম। “থামো! তুমি কে? তোমার কাছে কী আছে?”
চমকে উঠে ছায়াটি পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু প্রশিক্ষিত জওয়ানদের হাতে পালানো এত সহজ নয়। মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ধরা পড়ে গেল যুবকটি।
তল্লাশি শুরু হলো। কালো রঙের লুঙ্গির ভাঁজ থেকে বেরিয়ে এলো তিনটি সোনার বিস্কুট ও একটি সোনার কয়েন। সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাচার করার পরিকল্পনা ছিল। যুবকের নাম নাঈম শেখ। মাত্র ২৫ বছর বয়স। প্রথমে ভয়ে কাঁপছিল সে, কিন্তু জেরার চাপে ভেঙে পড়ে জানালো, সোনা পাচারের জন্য তাকে ১০,০০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
বিএসএফের কমান্ডিং অফিসার উত্তম সিং বললেন, “এই সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে এমন পাচারের ঘটনা প্রায়শই ঘটে। আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ সবসময় সতর্ক রয়েছে। তবে এই চক্রের মূল হোতাকে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।”
সোনা বাজেয়াপ্ত হওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। স্থানীয় গ্রামে শুরু হলো চর্চা। কেউ বলছে, “দেখেছো, ছেলেটি কত বড় রিস্ক নিয়েছে! ধরা পড়লে জীবন শেষ।” আবার কেউ বলছে, “এসব কাজের পেছনে বড় বড় লোক থাকে। তারা নিজেরা ধরা পড়ে না, গরীব লোককে কাজে লাগায়।”
পরের দিন, উদ্ধার হওয়া সোনা কাস্টমসের হাতে তুলে দেওয়া হলো। কাস্টমস অফিসাররা সোনাগুলো পরীক্ষা করে জানালেন, এর বাজার মূল্য প্রায় ৩৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৪৭ টাকা।
সীমান্তের এই লড়াই প্রতিদিনের। কখনও সোনা, কখনও মাদক, কখনও বা অবৈধ সামগ্রী। বিএসএফের জওয়ানরা রাতদিন সতর্ক থেকে সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখছেন।
কিন্তু নাঈমের মতো যুবকদের জন্য কি কোনো বিকল্প পথ নেই? কবে থামবে এই চক্র? প্রশ্নটা ভেসে থাকে চরভদ্র সীমান্তের বাতাসে, আর এর উত্তর খুঁজে ফেরে প্রতিদিন টহলরত জওয়ানদের মনে।
বিঃ দ্রঃ – মুর্শিদাবাদের ঘটনা অবলম্বনে লেখা।
|| সমাপ্ত ||
________