HomeStory of WestbengalDigital Arrest: বর্ধমানে ডিজিটাল অ্যারেস্ট

Digital Arrest: বর্ধমানে ডিজিটাল অ্যারেস্ট

পূর্ব বর্ধমানের পালিতপুরের ঘটনা অবলম্বনে লেখা।

পালিতপুরের এক নিস্তব্ধ সকালে, পূর্ব বর্ধমানের তিব্বতি বাবার আশ্রমে এক মোবাইল ফোনের রিংটোন ভেঙে দিলো আশ্রমিক অশোক চক্রবর্তীর ধ্যান। মৃদু হাসি মুখে ফোনটি হাতে তুলে নিলেন তিনি। অপরিচিত একটি নম্বর ভেসে উঠল স্ক্রিনে। সাধারণত অচেনা ফোনকল এড়িয়ে চলেন অশোকবাবু, কিন্তু কেন যেন এবার কলটি রিসিভ করলেন।

“নমস্কার, আমরা মহারাষ্ট্র পুলিশ থেকে বলছি। আপনাকে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করা হলো,” ওপারের কণ্ঠটি ভারি অথচ ভয়াবহ।

এক মুহূর্ত থমকে গেলেন অশোকবাবু। “ডিজিটাল অ্যারেস্ট?” শব্দ দুটি তাঁর কাছে যেন এক নতুন জগৎ খুলে দিল।

“আপনার নামে সতেরোটি মামলা আছে,” ওপারের কণ্ঠ শোনাল। “সবই তিলকনগর থানায়। আপনি হয়ত জানেন না, কিন্তু আপনাকে একটি সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এখনই ভিডিয়ো কলে যোগ দিন।”

অশোকবাবু বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ভিডিয়ো কল কেন?”

“আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে,” প্রতারকটি সুকৌশলে জানায়। “আপনার আশ্রমের চারপাশ ঘুরিয়ে দেখান। আপনি কোথায় আছেন, সেটা প্রমাণ করুন।”

অশোকবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তিনি জানতেন যে এ ধরণের কোনো অপরাধের সাথে তাঁর কোনো যোগসূত্র নেই। কিন্তু আশ্রমের শান্ত পরিবেশে এমন হুমকি তাঁকে কিছুটা অস্থির করেছিল।

ভিডিয়ো কলটি শুরু হল। ওপারে একজন পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তি দেখা গেল। “আমাদের সহযোগিতা করুন। আপনার আশ্রমে কী কী মূল্যবান আছে জানাতে হবে। আপনার মোবাইলের ব্যাঙ্ক অ্যাপ বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টও দেখান।”

অশোকবাবুর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করল। ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করলেন যে এ শুধুই একটি প্রতারণা। তবুও, শান্ত গলায় উত্তর দিলেন, “আমার কাছে যা আছে, তা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। সেটাও কি আপনাদের দেখাতে হবে?”

ওপারের প্রতারক বুঝতে পারল, এ সাধুর থেকে কিছু আদায় করা সহজ হবে না। একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে দিলেও, অশোকবাবুর শান্ত মুখ আর নিস্তরঙ্গ কণ্ঠস্বর তাকে হতাশ করল।

অবশেষে, প্রতারক একটি নাটকীয় মোড় নিয়ে বলল, “আপনার আশীর্বাদ চাই।”

অশোকবাবু মৃদু হাসলেন, “ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।”

ফোনের ওপার থেকে প্রতারকটি হঠাৎ করেই কল কেটে দিল।

পরবর্তী সকাল
অশোকবাবু তাঁর আশ্রমিকদের কাছে পুরো ঘটনার কথা বললেন। সবাই হতবাক, কিন্তু তাঁরা একমত হলেন একসঙ্গে—এটা প্রযুক্তির দুনিয়ায় সাইবার প্রতারণার নতুন রূপ।

অশোকবাবু এরপর স্থানীয় পুলিশে যোগাযোগ করলেন। পুলিশ তাঁকে নিশ্চিত করল যে এটি একটি প্রতারণার চেষ্টা এবং তাঁকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিল।

আশ্রমে প্রতিদিনের মতো সূর্যের আলো ফোটে। অশোকবাবু আবার ধ্যানে বসলেন। প্রযুক্তি যতই এগোক, তাঁর বিশ্বাসের জগৎ রয়ে গেল অপরিবর্তিত।

বিঃ দ্রঃ – পূর্ব বর্ধমানের পালিতপুরের ঘটনা অবলম্বনে লেখা।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন