ভদ্রেশ্বর লিচুবাগানের ছোট্ট পাড়াটি চিরাচরিত নীরবতায় মোড়া ছিল। কিন্তু সেদিন সকালে সেই নীরবতা ভেঙে গেল সঙ্গীতা কবিরাজের চিৎকারে।
“এই কী হয়েছে! ঘরের সব কিছু এলোমেলো! তালা ভাঙা! আলমারির সব জিনিস লুট! এমনকি আমার প্রিয় ফেসওয়াশও নিয়ে গেছে চোর!”
সঙ্গীতার স্বামী রাহুল দ্রুত ঘরে ঢুকে দেখলেন, সত্যিই ঘর লণ্ডভণ্ড। দামি হাতঘড়ি, সোনার গয়না, ক্যামেরা, এমনকি কিছু টাকা-পয়সাও চুরি হয়ে গেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, চোর শুধুমাত্র দামি জিনিসেই সন্তুষ্ট হয়নি, তার নজর পড়েছে সঙ্গীতার প্রসাধনী সামগ্রীতেও।
শ্বশুর শ্যামাপ্রসাদ বিস্মিত হয়ে বললেন, “চুরি তো অনেক দেখেছি, কিন্তু চোর ফেসওয়াশও নিয়ে যাবে, এটা তো জীবনে শুনিনি!”
পুলিশ এলে প্রতিবেশী পিয়ালী ভট্টাচার্য জানান, “গত রাতে কুকুরেরা বেশ ডাকছিল। আমরা ভেবেছিলাম, এমন তো প্রায়ই হয়। কে জানত, তখনই চুরি হচ্ছে!”
তদন্ত শুরু হলো। এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে একই ধরনের চুরি হয়েছে বলে খবর এল। কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল—সব জায়গা থেকেই কিছু না কিছু প্রসাধনী গায়েব!
পুলিশের সন্দেহ হলো, চোর শুধু সাধারণ চোর নয়, সম্ভবত সে প্রসাধনী প্রেমীও! এলাকার পুরনো অপরাধীদের খোঁজ শুরু করল পুলিশ। অবশেষে ধরা পড়ল গৌরব নামে এক চোর, যে নিজের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ভীষণ সচেতন! তার ঘর থেকে পাওয়া গেল প্রচুর প্রসাধনী দ্রব্য, যার মধ্যে সঙ্গীতার ফেসওয়াশটিও ছিল!
পুলিশ যখন চোরকে ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, তখন সঙ্গীতা দাঁড়িয়ে চোরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “চুরি করলে কর, কিন্তু ফেসওয়াশ কেন চুরি করলি?”
চোর লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল, “দিদি, মুখের যত্ন নিতে হয় তো!”
এই উত্তর শুনে সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল। তবে হাসির মাঝেও সঙ্গীতা বললেন, “পুলিশকে বলব, যেন তোর শাস্তিটা হয় ঠিকঠাক! আর একটা কথা, ফেসওয়াশ কিনতে হলে দোকানে যা, অন্যেরটা চুরি করিস না!”
বিঃ দ্রঃ – ভদ্রেশ্বরের ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।