HomeInspirational StoryHooghly: বোবা পুলিশের বাঁশিই অস্ত্র

Hooghly: বোবা পুলিশের বাঁশিই অস্ত্র

চন্দ্রনাথ এক নীরব যোদ্ধায় পরিণত হন

হুগলির গুড়াপ থানার বেলতলা মোড়। দূরপাল্লার বাস, ট্রেকার, অটো, টোটোর ব্যস্ততম চলাচলে এখানে যেন প্রতিদিনের ছন্দ। আর সেই মোড়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক সামলাচ্ছেন এক বিশেষ মানুষ—চন্দ্রনাথ ঘোষ। চোখে কালো চশমা, গায়ে ট্রাফিক পুলিশের পোশাক, আর মুখে বাঁশি। তিনি কথা বলতে পারেন না। তবে তাঁর নিঃশব্দ বাঁশির সুরই যেন সেখানকার নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখে।

মাত্র দেড় বছর বয়সে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় চন্দ্রনাথ হারিয়ে ফেলেছিলেন কথা বলার ক্ষমতা। আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাত পান। সেই আঘাতে তাঁর ভোকাল কড এবং কানের পর্দা চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁর বাবা-মা চেন্নাই থেকে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত অসংখ্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেছেন তাঁকে, কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আর তখন থেকেই চন্দ্রনাথ এক নীরব যোদ্ধায় পরিণত হন।

অদম্য জেদ এবং দায়িত্ববোধ

চন্দ্রনাথের পরিবার ছিল এক নিম্নবিত্ত কৃষক পরিবার। তাঁর বাবা বিশ্বনাথ ঘোষ যাত্রাদলে অভিনয় করে যা আয় করতেন, তা দিয়ে কোনও মতে সংসার চলত। দুই বিঘা জমি ছাড়া আর কিছুই ছিল না তাদের। কিন্তু অর্থের সীমাবদ্ধতা কখনও চন্দ্রনাথের লড়াইয়ের পথে বাধা হতে পারেনি। প্রতিবন্ধী স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাঁকে পড়াশোনা ছাড়তে হয়। তবে জীবনের পাঠ থেমে থাকেনি।

চন্দ্রনাথের স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করা। যদিও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তা অধরাই রয়ে গেছে, কিন্তু নিজের ইচ্ছাশক্তি দিয়ে তিনি নিজেই যেন এক আলোকিত পথ তৈরি করেছেন। গত দু’বছর ধরে গুড়াপ থানার অনুমতি নিয়ে বেলতলা মোড়ে ট্রাফিক সামলাচ্ছেন তিনি। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি কোনো কিছুই তাঁকে তাঁর কর্তব্যপথ থেকে সরাতে পারেনি।

নিঃশব্দ সেবক

বেলতলা মোড়ে দাঁড়িয়ে চন্দ্রনাথ বাঁশি বাজিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর চোখের অভিজ্ঞ চাহনিতে গাড়ির চলাচল মসৃণ হয়ে যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পথচারীরা বলেন, চন্দ্রনাথ যতদিন এখানে আছেন, ততদিন কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। তাঁর নিঃশব্দ সেবার জন্য এলাকাবাসীর মনেও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন।

পরিবার এবং সংগ্রাম

বাড়ি থেকে প্রতিদিন প্রায় দু’কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বেলতলা মোড়ে আসেন চন্দ্রনাথ। তাঁর সঙ্গে রয়েছে স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বাবা-মায়ের দায়িত্ব। চন্দ্রনাথের এক ছেলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে। তাঁর বাবা বিশ্বনাথ ঘোষ লিভার ও হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। এতো চ্যালেঞ্জের মধ্যেও চন্দ্রনাথের একনিষ্ঠতা এবং দায়িত্ববোধ অটুট।

মানবিক সাহায্য এবং আশা

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন চন্দ্রনাথকে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করছে। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন তাঁর কাজের প্রশংসা করে তাঁকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে চন্দ্রনাথের পরিবার এবং এলাকাবাসীর আশা, চন্দ্রনাথের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হবে।

অনুপ্রেরণার প্রতীক

চন্দ্রনাথ ঘোষের জীবন আমাদের শেখায়, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনও জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে বাধা হতে পারে না। তাঁর নিঃশব্দ লড়াই এবং সমাজের প্রতি অবদান এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি কেবল এক নিঃশব্দ সেবক নন, তিনি আমাদের সবার জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।

বিঃ দ্রঃ – হুগলীর বোবা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব কর্তব্য নিয়ে লেখা এই গল্প।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন