HomeStory of WestbengalJalpaiguri: অজগরের প্রদীপ কামড়

Jalpaiguri: অজগরের প্রদীপ কামড়

এই ঘটনায় ভয়াবহ আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে।

চারের বাড়ি, ময়নাগুড়ির শান্ত গ্রাম। সকালে মৃদু শীতল বাতাসে ডুবে থাকা গ্রামটি যেন হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠল। খবরটা যেন ঝড়ের মতো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল—একটি অজগর সাপ ঢুকেছে পাশের বাড়িতে। সবাই ছুটল সেই বাড়ির দিকে। কে দেখবে, কে ধরবে, কে ছবি তুলবে—আলোচনার ঝড় উঠল ভিড়ের মধ্যে।

প্রদীপ মণ্ডল, বছর ষোলোর একটি ছেলেমানুষি আর সাহসের মিশ্রণে গড়া এক তরুণ। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির ফাঁকে, জীবনের রোমাঞ্চ খোঁজার নেশায় মত্ত সে। খবর শুনেই বই-খাতা ফেলে দৌড় দেয় ঘটনাস্থলে। সেখানে পৌঁছেই দেখে, পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা সাবধানে সাপ ধরার পরিকল্পনা করছে। প্রদীপের ভিতরে চঞ্চল কিশোর মনটা তখন তীব্র ভাবে বেগ পায়।

“অজগর ধরার ভিডিয়োটা ইউটিউবে দিতে পারলে দারুণ হবে!” ভাবতে ভাবতে সাপ ধরার কৌশল বুঝে ওঠার আগেই সবার চোখের আড়ালে সাপের দিকে হাত বাড়ায় প্রদীপ। মুহূর্তে সাপটি ছোবল মেরে চেপে ধরে তার ডান হাত।

ব্যথার তীব্রতা এতটাই যে প্রদীপের চিৎকারে গ্রামবাসী হতভম্ব হয়ে যায়। হাত থেকে রক্ত গলগল করে বেরিয়ে আসে। প্রদীপ বাঁচার চেষ্টায় সাপটি ঝাঁকিয়ে ছোঁড়ার চেষ্টা করে, কিন্তু শক্তির বিচারে মানুষ অজগরের কাছে হার মানে। পরিবেশপ্রেমীরা দ্রুত এসে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। অনেক কসরতের পর সাপটিকে নিয়ন্ত্রণে আনেন তারা।

প্রদীপ তখনও কাতরাচ্ছে। রক্তে ভিজে গেছে মাটির টুকরো, তার মুখ ফ্যাকাশে। উপস্থিত লোকজন তাকে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে যাওয়া প্রদীপ তখন শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

গ্রামজুড়ে এই ঘটনায় ভয়াবহ আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে। চারদিকে গুঞ্জন, আলোচনা। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সম্পাদক নন্দু রায় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “সাপ ধরার মতো বিপজ্জনক কাজ কোনওভাবেই প্রশিক্ষণ ছাড়া করা উচিত নয়। সাহস আর উন্মাদনা কখনও কখনও জীবনের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে।”

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা প্রদীপ যেন তার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোমাঞ্চ খোঁজার লোভটা তখন তার কাছে তুচ্ছ মনে হলো। সেই মুহূর্তে তার মনে পড়ল তার বইখাতার কথা, পরীক্ষার কথা, আর তার পরিবারের মুখ।

কিন্তু তার এক ভুলের কারণে শুধু সে নয়, পুরো গ্রাম যেন শিখল জীবন আর প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধার গুরুত্ব। আর এক অজগর, সে ফিরে গেল তার প্রাকৃতিক আশ্রয়ে, কিন্তু রেখে গেল এক ভয়াবহ গল্প। যা চারার বাড়ি গ্রামের মানুষ চিরকাল মনে রাখবে।

বিঃদ্রঃ – জলপাইগুড়ির ঘটনা অবলম্বনে লেখা।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন