রতন সরকারের বাড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজপুর সোনারপুর এলাকার ১২৩ ফরতাবাদ রোডে অবস্থিত একটি পুরনো তিনতলা বাড়ি। ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই বাড়ি নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে দোতলা, তিনতলা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে গত এক বছর ধরে এক অদ্ভুত ঘটনা এই বাড়ির বাসিন্দাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
তেলের রহস্য
প্রথমে ঘটনাটি শুরু হয় ছোট্ট একটি চিহ্ন থেকে। কয়েক বছর আগে বাড়ি রং করানোর সময়, রতন সরকার এবং তাঁর পরিবারের চোখে পড়ে দেওয়ালের কিছু অংশ কালচে হয়ে চিটচিটে হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা ভেবেছিলেন এটি হয়তো পুরনো বাড়ির কোনো সাধারণ সমস্যা। তাই বিষয়টিকে আর বিশেষ গুরুত্ব দেননি। কিন্তু দিন যেতে যেতে দেওয়াল থেকে গড়িয়ে পড়া কালো চিটচিটে পদার্থ বাড়তে থাকে। এখন এটি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বাড়ির কার্নিস, মেঝে—সবই তেলে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
পরিবারের আতঙ্ক
প্রথমে পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন হয়তো কোনো পাইপ লিক করছে বা মাটির নিচ থেকে কিছু বেরোচ্ছে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও রহস্যের কোনো সমাধান হয়নি। তেল শুধু বাড়ির ভিতরেই সীমাবদ্ধ নেই, তা ধীরে ধীরে বাইরের দেওয়ালেও ছড়িয়ে পড়ছে। রতনবাবু বলেন, “প্রতিদিন আমরা জানলার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে হাত চিটচিটে হয়ে যায়। বিষয়টি আমাদের কাছে ভয়ানক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
প্রতিবেশীদের উদ্বেগ
বাড়ির বাসিন্দাদের পাশাপাশি পাড়ার মানুষও আতঙ্কিত। “কোথা থেকে এত তেল বেরোচ্ছে?” এমন প্রশ্ন যেন পুরো পাড়ার মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, “এটা কি মাটির তলায় থাকা কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ?” আবার কেউ মনে করছেন, “এটা হয়তো কোনো ভৌতিক ঘটনা!”
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টি আকর্ষণ
রতন সরকার আর বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে সাহায্য চেয়েছেন। ইতিমধ্যেই খবর দেওয়া হয়েছে ONGC, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের IIPC বিভাগ, রাজপুর সোনারপুর পুরসভা, এবং নরেন্দ্রপুর থানায়। পুরসভার একটি প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই বাড়ি পরিদর্শন করেছে। নজরুল আলি মণ্ডল, পুরসভার পুর পারিষদ সদস্য, জানান, “প্রাথমিক পরীক্ষায় বোঝা গেছে, তেলটি দাহ্য নয়। তবে এটি কী ধরনের পদার্থ, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
গবেষণা ও সম্ভাবনা
আগামী মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের বিশেষজ্ঞরা এসে নমুনা সংগ্রহ করবেন। গবেষকরা মনে করছেন, মাটির নিচে থাকা কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ হয়তো চাপের কারণে উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছে। তবে এটি যে সাধারণ ঘটনা নয়, তা সকলেই একমত।
গল্পের মোড়
রতনবাবু এবং তাঁর পরিবার এখনও উত্তর খুঁজছেন। এদিকে, পাড়ার মানুষদের কৌতূহল বাড়ছে। কেউ কেউ বলছেন, “যদি তেলটি দামী প্রাকৃতিক সম্পদ হয়, তাহলে তো রতনবাবুর কপাল খুলে যাবে!” আবার কেউ বলছেন, “এর পেছনে কোনো অলৌকিক শক্তি লুকিয়ে রয়েছে।”
রতনবাবুর ছোট ছেলে তন্ময় বলল, “আমি নিজে ভূতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছি। আমার বিশ্বাস, এই তেল আমাদের এলাকায় বড় কোনো ঘটনা ঘটাতে চলেছে। হয়তো এটি আমাদের এলাকাকে খ্যাতি এনে দেবে!”
উপসংহার
এই রহস্যময় তেলের উৎস কী? এটি কি সত্যিই প্রাকৃতিক সম্পদ, নাকি কোনো অদ্ভুত ভূতত্ত্বের ফল? রতন সরকারের বাড়ি যেন আজ একটি ছোট গবেষণাগারে পরিণত হয়েছে। আশেপাশের মানুষজনও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অপেক্ষা করছেন—এই রহস্যের শেষ পরিণতি কী হবে।
সময়ই হয়তো দেবে এই প্রশ্নের উত্তর। কিন্তু এই অদ্ভুত ঘটনার জন্য রতন সরকারের বাড়ি এখন সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
বিঃ দ্রঃ – দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাহিনী অবলম্বনে লেখা।
|| সমাপ্ত ||
________