কলকাতার প্রাণকেন্দ্র, জনবহুল এসপ্লানেড। দিনের আলো থেকে রাতের কোলাহল, সব সময়ই ব্যস্ত। এখানেই বহু মানুষের জীবন ছুঁয়ে যাওয়া একটি জায়গা, ডোরিনা ক্রসিং। শহরের বহু ইতিহাস ও আন্দোলনের সাক্ষী এই জায়গা, যার নাম আজ বদলে গেছে। নতুন পরিচয়ে, নতুন গল্পের সঙ্গে শহরের মানচিত্রে উঠে এসেছে—‘অভয়া ক্রসিং’।
ডোরিনা ক্রসিংয়ের নামকরণ নিয়ে অনেকেই জানতেন না সঠিক ইতিহাস। কেউ ভাবতেন, কোনও ইংরেজ মেমসাহেবের নাম, কেউ আবার ধরে নিতেন হয়তো ব্রিটিশ শাসনের কোনও ছায়া এই নামের পেছনে। পরে জানা গেল, ক্রসিংয়ের নামের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল একটি দোকানের গল্প।
সত্তরের দশকে ডোরিনা ক্রসিংয়ের এক কোণে ছিল একটি বস্ত্র বিপণী, নাম ‘মা ডোরিনা’। দোকানের বোর্ডে ছিল এক বিশেষ নিয়ন আলো, যা দূর থেকে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। সময়ের সঙ্গে দোকানটি হারিয়ে গেলেও, ক্রসিংয়ের নাম থেকে গিয়েছিল। এই ক্রসিং হয়ে উঠেছিল শহরের মানুষের চলার সঙ্গী। কিন্তু, সেই নামের পরিবর্তন চান শহরের চিকিৎসক সমাজ।
একটি নতুন নাম, একটি নতুন যাত্রা
আরজি কর মেডিকেল কলেজের এক নির্যাতিতা নারীর স্মৃতিকে সম্মান জানাতে উঠে আসে নাম পরিবর্তনের দাবি। আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা চান, ক্রসিংয়ের নাম হোক ‘অভয়া’, যা প্রতীক হবে সাহস, শক্তি ও সংহতির। তাঁদের এই আবেদনে সাড়া দেয় গুগল।
ডোরিনা ক্রসিংয়ের নাম মুছে, গুগল ম্যাপে জায়গা করে নেয় ‘অভয়া ক্রসিং’। গুগলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’ ইমেল করে মুখ্যসচিব ও মেয়রকে। চিকিৎসকদের এই উদ্যোগকে অনেকেই অভিনন্দিত করেন।
নাম বদলের আড়ালে গল্পের আলো
ডোরিনা ক্রসিংয়ের নতুন নাম শহরের এক অংশকে নতুন ভাবে চিনতে শেখায়। অভয়া শুধু একটি নাম নয়, বরং একটি শক্তিশালী প্রতীক। যে শহর একসময় ইংরেজদের দেওয়া নাম নিয়ে বেঁচেছিল, সেই শহর এখন নিজের নতুন পরিচয় গড়ে তুলছে।
‘অভয়া ক্রসিং’ শুধু নির্যাতিতার প্রতি শ্রদ্ধা নয়, এটি সেই সব গল্পেরও প্রতিনিধি যা শহরের প্রতিটি ইট-পাথরে লুকিয়ে থাকে। হয়তো মা ডোরিনার সেই আলো ঝলমলে দোকান আর নেই, কিন্তু অভয়া ক্রসিংয়ের নতুন আলোতে আজ সাহসের গল্প লিখছে কলকাতা।
এই নামকরণের পেছনে যে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের গল্প, তা আগামী প্রজন্মের কাছে হয়ে থাকবে শহরের পরিবর্তনের সাক্ষী। ‘অভয়া’ নামটি যেন এক মৃদু আহ্বান—চলুন, আমরা সবাই সাহসী হই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, এবং অন্ধকারে আলো জ্বালাই।
বিঃদ্রঃ – কলকাতার পরিবর্তনের কাহিনী নিয়ে লেখা এই গল্প।
|| সমাপ্ত ||
________