বিষ্ণুপুর: আমরা সবাই জানি যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বাগত জানাতে বা যুদ্ধে বিজয় উদযাপনে কামান দাগা হয়। আর একুশ তোপের ধ্বনিতে বিজয়োৎসব পালনও অনেক দেশে প্রচলিত। তবে জানেন কি, বাংলার বুকে দুর্গাপুজোর সময়ও কামান দাগা হয়? বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে, অষ্টমী পুজো ও নবমীর সন্ধিক্ষণে তিনটি কামানের তোপ দেগে সন্ধিপুজোর সূচনা করা হয়। শত শত বছর ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্য আজও মল্লভূমে বেঁচে রয়েছে।
[আরও পড়ুন]: প্রাণঘাতি কঙ্গো জ্বর হলে কি করবেন, আর কি করবেন না জানুন
এই কামান দাগার প্রথা শুরু করেছিলেন বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজারা। অষ্টমীর পুজোতে পুষ্পাঞ্জলি শেষ হওয়ার পর তিনটি তোপধ্বনি দিয়ে পুজোর পর্ব শুরু হয়। এরপর নবমীর মধ্যরাতে মহামারীর দেবী খচ্চরবাহিনীর বিশেষ পুজো হয়। যেটা পুরোহিত ঘটের দিকে পিছন ফিরে বসে করেন। এই সময় মন্দিরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
[আরও পড়ুন]: এবার ইন্টারনেট ছাড়াই দেখা যাবে ভিডিও। আসছে সেই
এই ঐতিহ্যের পেছনে আছে এক প্রাচীন গল্প, যা অলৌকিকও বটে। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে মল্লভূমের ১৯তম রাজা জগৎমল্ল শিকার করতে গিয়ে বিষ্ণুপুরের জঙ্গলে এক রহস্যময় ঘটনার সাক্ষী হন। শিকার করতে গিয়ে তিনি একটি হরিণের পিছু নেন, কিন্তু হরিণটি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়। পরে তিনি এক বকেকে শিকারের জন্য তাঁর ওপর বাজপাখি ছেড়ে দেন। কিন্তু পাখিটি ফিরে আসে, ভীত হয়ে। এরপর রাজা দেখতে পান এক অপূর্ব রমণীকে, যিনি হঠাৎ বিকট আওয়াজ করে অন্তর্ধান করেন। আকাশ থেকে দৈববাণী হয়— “আমি শিবসহচরী শিবানী, আমাকে মূর্তিরূপে প্রতিষ্ঠা করো।” রাজা বুঝলেন দেবীর কৃপা হয়েছে, এবং বিষ্ণুপুরে মৃন্ময়ী দেবীর মন্দির স্থাপন করেন।
[আরও পড়ুন]: এআই মডেলরাই হয়ে উঠবে পুরুষের আদর্শ পার্টনার? প্রশ্ন নানা মহলে।
কালের পরিবর্তনে রাজতন্ত্র না থাকলেও, বিষ্ণুপুরের এই ঐতিহ্য আজও টিকে আছে। নরবলি প্রথাও বহু আগেই নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু মল্লভূমে এখনো সেই কামান দাগার প্রথা বহাল রয়েছে, যা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমায়।
________