তিনজন ইরানি যুবক—রেজা, আরমান, আর নাভিদ—দিল্লির এক কোণে নিজেদের অতীত ভুলে নতুন জীবনের খোঁজে এসেছিল প্রায় আট বছর আগে। তাদের যাত্রা ছিল বিপজ্জনক আর অনিশ্চিত। জাল ভিসা আর পাসপোর্টের মাধ্যমে তারা ঢুকেছিল ভারতে। প্রথম দিকে রাজধানীর ব্যস্ত জীবনে তারা প্রায় অদৃশ্য ছিল, ছোটখাটো কাজ করে টিকে ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে, পুলিশি নজর তাদের চারপাশে বাড়তে থাকে।
পালানোর পথ
একদিন, দিল্লিতে তাদের পরিচয় নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে, তারা বুঝতে পারে আর এখানে থাকা সম্ভব নয়। রাতের আঁধারে তারা রওনা দেয় বাংলার পথে। বাংলা এসে তারা আলাদা আলাদা জায়গায় লুকিয়ে জীবন কাটাতে থাকে। গ্যারেজে কাজ করা, ক্যাটারিং সার্ভিসে শ্রম দেওয়া, এমনই ছোট কাজ তাদের টিকে থাকার উপায় হয়ে ওঠে। কিন্তু এইসব কিছুর মধ্যে, রেজা খুঁজে পায় এক নতুন আশ্রয়—এক বাংলাদেশি যুবতীর হৃদয়।
প্রেমের জটিলতা
প্রেমে পড়ার পর রেজার ভেতরে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। সে বুঝতে পারে, এই লুকিয়ে থাকার জীবন আর চালানো সম্ভব নয়। নিজের দেশ, নিজের পরিবার, নিজের শিকড়ের টান যেন আরও গভীর হয়ে ওঠে। তবে সমস্যাটা ছিল বড়। তার পাসপোর্ট জাল ছিল, আর সীমান্ত পেরোনোর কোনও বৈধ উপায় তাদের হাতে ছিল না। এই পরিস্থিতিতে দেখা হয় এক রহস্যময় দালালের সঙ্গে।
দালালের প্রস্তাব
দালাল তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়, ১০-১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাদের বাংলাদেশ পাঠিয়ে দেবে। সেখান থেকে নতুন জাল পাসপোর্ট তৈরি করে ইরানে ফেরার ব্যবস্থা করবে। দালালের কথা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতিতে কোনও পাসপোর্টই সঠিকভাবে চেক করা হবে না।
রেজা, আরমান, আর নাভিদ শেষবারের মতো নিজেদের ভাগ্যের ওপর ভরসা করে। দালালের নির্দেশে সামশেরগঞ্জ সীমান্তে এসে পৌঁছায় তারা। নদীপথ ধরে বাংলাদেশে ঢোকার পরিকল্পনা ছিল। তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বিশেষ একটি পদ্ধতি—গরু পাচারের জন্য ব্যবহৃত কলা গাছের খোল দিয়ে তৈরি ভেলায় নদী পেরোনোর পরিকল্পনা।
সন্দেহ আর ধরা পড়া
কিন্তু সীমান্তের কাছে পৌঁছানোর পর, তাদের আচরণ আর শরীরের গঠন দেখে বিএসএফ জওয়ানদের সন্দেহ হয়। নদীর ধারে তাদের আটকানো হয়। শুরুতে তারা নানা গল্প বানানোর চেষ্টা করে, কিন্তু জওয়ানদের কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সবকিছুই প্রকাশ পায়।
তাদের গল্পের পরিণতি
তিন যুবকের এই গল্প যেন প্রেম, লোভ, আর পলায়নের জটিল কাহিনি হয়ে দাঁড়ায়। রেজার হৃদয় ভাঙা ভালোবাসা, আরমানের দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা, আর নাভিদের শান্ত জীবনের স্বপ্ন—সবকিছুই সীমান্তের সেই রাতে থেমে যায়।
তাদের ধরা পড়া শুধুমাত্র এক কাহিনির শেষ নয়, বরং আরও অনেক প্রশ্ন তুলে দেয়—এই ভুয়ো পরিচয়ের জীবন থেকে সত্যিকারের মুক্তি কি কখনও সম্ভব? আর সেই প্রেম, যে রেজাকে নিজ শিকড়ে ফিরতে বাধ্য করেছিল, তার কী পরিণতি হবে?
বিঃদ্রঃ – সামশেরগঞ্জে ৩ ইরানি যুবককে কেন্দ্র করে লেখা এই গল্পটি।
|| সমাপ্ত ||
________