HomeStory of WestbengalIndian Railway: বিষ্ণুপুর থেকে তারকেশ্বর: অপেক্ষার অবসান

Indian Railway: বিষ্ণুপুর থেকে তারকেশ্বর: অপেক্ষার অবসান

ভাবাদিঘি এলাকার জমিজটে আটকে যায় কাজ

বিষ্ণুপুর থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত রেলপথের কাজ নিয়ে এলাকার মানুষের মনে ছিল একরাশ স্বপ্ন আর ততোধিক হতাশা। জমিজট, আন্দোলন, প্রকল্প থমকে যাওয়ার মতো অসংখ্য বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে এই রেল প্রকল্পকে। তবে অবশেষে সেই জটিল পথ অতিক্রম করে বড় গোপীনাথপুর পর্যন্ত রেল চলাচলের পরীক্ষা সফল হওয়ায় এলাকার মানুষের মনে যেন এক নতুন আশার আলো জ্বলে উঠেছে।

শুক্রবারের সকাল: অপেক্ষা ও উত্তেজনা

বড় গোপীনাথপুর গ্রামের প্রতিটি কোণে তখন উত্তেজনার ঢেউ। ছোটবেলায় রেলগাড়ি দেখার জন্য বিষ্ণুপুর স্টেশনে যাওয়া পঞ্চাশোর্ধ্ব কার্তিক বাউরি দাঁড়িয়ে ছিলেন নতুন রেলপথের ধারে। তাঁর চোখে ছিল এক অদ্ভুত উন্মাদনা। “আমার জীবদ্দশায় এ পথে ট্রেন চলতে দেখব কিনা, সন্দেহ ছিল। আজ সেই স্বপ্ন পূর্ণ হতে চলেছে,” বললেন তিনি।

অন্যদিকে, স্কুলের পোশাক পরা কয়েকজন কিশোরকিশোরী অপেক্ষায় ছিল প্রথম ট্রেনের ঝলক দেখার। “আমাদের স্কুল অনেক দূরে। ট্রেন চালু হলে খুব সুবিধা হবে,” বলল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মিতালি।

রেল চলাচলের পরীক্ষা

শুক্রবার দুপুরে ময়নাপুর থেকে বড় গোপীনাথপুর পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয় একটি ট্রেন। রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কর্মকর্তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে ট্রেনের গতিবিধি, ট্র্যাকের অবস্থা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খতিয়ে দেখেন। ট্রেনের ইঞ্জিন যখন বড় গোপীনাথপুর স্টেশনে এসে থামে, স্থানীয় মানুষের আনন্দধ্বনিতে এলাকা গমগম করে ওঠে।

“আজকের দিনটি আমাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে,” বললেন স্থানীয় ব্যবসায়ী দীপক ঘোষ। “রেলপথটি চালু হলে শুধু যাতায়াত নয়, ব্যবসার ক্ষেত্রেও উন্নতি হবে।”

জমিজট থেকে সমাধান: দীর্ঘ অপেক্ষার পর সফলতা

এই প্রকল্পের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। রেলপথের ট্র্যাক বসানোর কাজ শুরু হলেও ভাবাদিঘি এলাকার জমিজটে আটকে যায় কাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা জমি দিতে নারাজ ছিলেন। বহু আলোচনার পর শেষমেশ সমস্যার সমাধান হয়।

তবে সমস্যা এখানেই শেষ হয়নি। মাস কয়েক আগেও বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের হেতাল গ্রামের বাসিন্দারা আন্দোলন শুরু করেন। তাদের দাবিদাওয়া মেটাতে রেল কর্তৃপক্ষকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। শেষে সবার সহযোগিতায় বাধাগুলো দূর হয়।

আগামী দিনের স্বপ্ন

এবার বড় গোপীনাথপুর থেকে রেলপথ আরও দূরে গড়ানোর অপেক্ষা। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, এই রেলপথ শুধু যাতায়াতের মাধ্যম হবে না, বরং কর্মসংস্থান ও ব্যবসার সুযোগ তৈরি করে এলাকার অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

রেল চালানোর পরীক্ষার সফলতায় এলাকার মানুষ আজ উচ্ছ্বাসে ভাসলেও, তাঁদের চোখে এখন আরও বড় স্বপ্ন। বিষ্ণুপুর থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত পুরো রেলপথের কাজ সম্পূর্ণ হলে তাঁদের গ্রামও জুড়ে যাবে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে।

কার্তিক বাউরি ট্রেনটি বড় গোপীনাথপুর থেকে ফিরে যাওয়ার সময় একটুখানি হাসলেন। “এই পথটা শুধু লোহার রেলপথ নয়, আমাদের স্বপ্নের পথ। আরও অনেক দূর যাবে।”

বড় গোপীনাথপুরের এই ছোট্ট গল্পটা যেন বড় এক পরিবর্তনের আভাস। যেখানে অপেক্ষার শেষে আসে সফলতার গল্প।

বিঃদ্রঃ- তারকেশ্বর – বিষ্ণুপুর রেল লাইনের খবরের আদলে লেখা এই কাহিনী।

|| সমাপ্ত ||

________

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন