HomeদেশMahakumbh: "বাবা আমাকে বাঁচাও" - মর্মান্তিক কুম্ভ

Mahakumbh: “বাবা আমাকে বাঁচাও” – মর্মান্তিক কুম্ভ

মহাকুম্ভের মর্মান্তিক ঘটনা অবলম্বনে লেখা

তোলপাড় গোটা দেশ। জোর তোলপাড় চলছে উত্তর প্রদেশ তো বটেই, দিল্লির প্রশাসনিক মহলেও। মহাকুম্ভের টানে বাংলা থেকেও প্রয়াগরাজে পাড়ি দিয়েছেন হাজার হাজার পুণ্যার্থী। সেই তালিকাতেই ছিল জলপাইগুড়ির মোদক পরিবার। মুহূর্তের হ্যাঁচকা টানে সন্তানকে পদপিষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচালেন বাবা। মহাকুম্ভ থেকে ফিরে শোনালেন হাড়হিম করা অভিজ্ঞতার কথা।

জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের বাসিন্দা রামপ্রসাদ মোদক মহাকুম্ভে সপরিবারে গিয়েছিলেন প্রয়াগরাজে। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী, ভাই, ভাইপো, এবং তাঁদের গুরুদেব শ্রী স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী পরমহংসদেবের প্রায় ৮০০ জন ভক্ত। এই ভক্তদের থাকার জন্য সেক্টর ১৭ হর্ষবর্ধন মার্গ ও হরিশ্চন্দ্র মার্গে কোকিলা মুখ মঠ ও হালিশহর মঠের পক্ষ থেকে বিশাল শিবির তৈরি করা হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরতির পর ঘোষণা করা হয়, রাত সাড়ে দশটায় ঠাকুর মহারাজের প্রতিকৃতি-সহ শোভাযাত্রা সহকারে ত্রিবেণী সঙ্গমে স্নান করতে যাওয়া হবে। সেই মোতাবেক প্রায় ৮০০ জনের বিশাল দলটি প্রবল ভিড় ঠেলে এগিয়ে চলে এবং রাত ১টার সময় সঙ্গমে পৌঁছায়। কিন্তু তাদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছিল।

রাত ২টো। স্নান শেষে ফিরে আসার পথে ঘটে বিপত্তি। লক্ষ লক্ষ মানুষের চাপ, বিশাল ঢেউয়ের মতো জনস্রোত তাদের ওপর আছড়ে পড়ে। ভিড় ঠেলে প্রথম চৌপথি পার করলেও দ্বিতীয় চৌপথিতে তীব্র ধাক্কা লাগে।

ঠিক সেই সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। পদ্মনাভ মোদক, মাত্র তেরো বছরের কিশোর, মানুষের প্রচণ্ড চাপে মাটিতে পড়ে যায়। তার ওপর দিয়ে যেন জনস্রোতের ঢেউ বয়ে যাচ্ছিল। সে অসহায়ভাবে চিৎকার করছিল, “বাঁচাও! বাঁচাও!” কিন্তু চারদিকে এত হট্টগোল যে কেউ শুনতে পাচ্ছিল না।

তবে এই চিৎকার শুনে তার বাবা মুহূর্তের জন্য থমকে যান। চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু যেন এগিয়ে আসছে! তিনি কোনও কিছু না ভেবে ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের শক্তি দিয়ে জনতার ভিড় ঠেলে ছেলেকে টেনে তুললেন। ছেলেকে বুকে চেপে ধরে তিনি মরিয়া হয়ে নিরাপদ স্থানে চলে আসেন।

বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে যায় পদ্মনাভ। কিন্তু তার চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। সেদিনের রাত যেন তার জীবনের এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল।

রামপ্রসাদ মোদক বললেন, “পুণ্যের আশায় গিয়েছিলাম, কিন্তু সেদিন বুঝলাম, প্রকৃত পুণ্য একটাই— নিজের আপনজনকে আগলে রাখা, তাদের জন্য প্রাণ দেওয়া।” মহাকুম্ভের ঢেউ এসেছিল মৃত্যুর বার্তা হয়ে, কিন্তু এক পিতার ভালোবাসার ঢেউ সেই মৃত্যুকে হারিয়ে দিল।

বিঃ দ্রঃ – মহাকুম্ভের মর্মান্তিক ঘটনা অবলম্বনে লেখা।

|| সমাপ্ত ||

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন