Homeউত্তরবঙ্গMalda: বৌমা ডাকে 'ডাইনি'

Malda: বৌমা ডাকে ‘ডাইনি’

এই সমাজ আর এগোতে পারবে না

যদুপুর গ্রামের সরু মাটির রাস্তা ধরে হাঁটলেই দেখা মিলবে ছোট ছোট কুঁড়েঘর, খেতের সীমানা ছুঁয়ে থাকা নারকেল গাছ, আর মাঝে মাঝে ঘন গাছপালার ছায়া। কিন্তু এই শান্ত গ্রামে সেদিন রাত নামার সাথে সাথেই দাউ দাউ করে জ্বলতে বসেছিল এক ভয়ঙ্কর অন্যায়—অন্ধবিশ্বাসের আগুনে পুড়ে মরতে বসেছিলেন সরলা দেবী।

সেই রাতে আকাশে চাঁদের আলো ম্লান ছিল। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সরলা দেবী, গায়ে পুরনো একখানা শাড়ি জড়ানো। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল পুত্রবধূ রানু আর একদল প্রতিবেশী, চোখে একরাশ ঘৃণা নিয়ে।

“ডাইনি! ওর জন্যই আমাদের সংসার শেষ হয়ে যাচ্ছে! আমার স্বামীকেও কেড়ে নিয়েছে, আমার সন্তানদের ওপর অভিশাপ দিয়েছে!” রানুর কণ্ঠ কাঁপছিল, কিন্তু তা ভয় থেকে নয়—উন্মাদ ক্রোধে।

পাশ থেকে একজন বলল, “হ্যাঁ গো, ডাইনি হলে তো ওকে বাঁচিয়ে রাখা ঠিক না। শাস্তি দিতে হবে!”

সরলা দেবী বোঝার চেষ্টা করছিলেন, কোথায় ভুল হয়েছিল তাঁর? কয়েক বছর আগেই তো পরপর দুই ছেলে মারা গেছে অসুখে। কিন্তু সেই শোকের ভার তিনি বইতে পারলেও, সমাজের ঘৃণার বোঝা তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না।

রানু কুড়োল হাতে এগিয়ে এল, “আজ তোকে শেষ করব!”

কিন্তু ঠিক তখনই হঠাৎ করে ভিড়ের মধ্যে থেকে এক যুবক এগিয়ে এল—সুমন, যে পাশের গ্রামের কলেজপড়ুয়া। সে গর্জে উঠল, “তোমরা সবাই কি একটুও ভাবছ না? এটা কোন যুগে বাস করছ তোমরা? অসুখে মৃত্যু হলে সেটার জন্য কি একজন নিরীহ বৃদ্ধাকে দায়ী করা যায়?”

কেউ কিছু বলল না। কিন্তু তাদের চোখে দ্বিধার ছাপ ফুটে উঠল।

সুমন আরও বলল, “ডাইনি বলে কিছু হয় না! এটা শুধু একটা মিথ্যে ধারণা, একটা সামাজিক অভিশাপ, যেটার কারণে কত নারীকে আজও অত্যাচার সহ্য করতে হয়। আর এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়েই তো কেউ কেউ ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটায়!”

এই কথাগুলো শুনে ভিড় আস্তে আস্তে পিছিয়ে গেল। রানুর হাত থেকে কুড়োল পড়ে গেল মাটিতে। সরলা দেবী হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, হয়তো ভাবছিলেন—আজকের এই একটুখানি সাহসই তাঁকে বাঁচিয়ে দিল।

পুলিশ এসে রানুকে গ্রেপ্তার করল। আর পাশের গ্রামের বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মীরা গ্রামে এসে সবাইকে বোঝাল—অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, নাহলে এই সমাজ আর এগোতে পারবে না।

সরলা দেবী সেদিন বেঁচে গেলেন। কিন্তু গ্রামে একটা পরিবর্তন শুরু হল—আর যেন কোনও নারীকে ‘ডাইনি’ বলে তকমা দিয়ে সমাজচ্যুত হতে না হয়, সেজন্য সকলে সচেতন হতে থাকল।

একটা ছোট্ট ঘটনা, কিন্তু একটা নতুন দিগন্তের সূচনা করল—যেখানে জ্বলবে না কোনও নিরীহ মানুষের শরীর, বরং পুড়ে ছাই হবে কুসংস্কারের কালো ছায়া।

বিঃদ্রঃ – মালদহের ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।

|| সমাপ্ত ||

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন