সন্ধ্যার আবছা আলোয় কাঁদরা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিল অভি, রাজন আর দিশান। অভি মোবাইল ফোনটি হাতে ধরে বলল, “এমন কিছু করতে হবে, যা একেবারে ভাইরাল হবে!”
দিশান উত্তেজিত হয়ে বলল, “তাহলে ট্রেনের বগির ছাদে উঠে রিলস বানাই! দেখবি, লাখ লাখ ভিউ আসবে!”
রাজন দ্বিধায় পড়ে গেল, “না রে দিশান, এটা খুবই বিপজ্জনক। এমন করলে বিপদ হতে পারে।”
কিন্তু ভাইরাল হওয়ার নেশায় অন্ধ দিশান শুনতে চাইল না কারও কথা। সে দ্রুত একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের বগির ছাদে উঠে গেল। মোবাইল ক্যামেরা অন করা মাত্রই আকস্মিকভাবে বিকট শব্দে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে লুটিয়ে পড়ল সে। মুহূর্তের মধ্যেই চারদিকে চিৎকার ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।
অভি আর রাজন হতবাক হয়ে গেল! তারা বুঝতে পারল, ভাইরাল হওয়ার নেশায় তারা যে খেলায় মেতেছিল, সেটাই তাদের বন্ধুর জীবন কেড়ে নিল। চোখের সামনে দিশান নিথর হয়ে পড়ে আছে।
দিশানের পরিবার যখন খবর পেল, তখন যেন আকাশ ভেঙে পড়ল তাদের মাথায়। দিশানের মা বারবার বলছিলেন, “আমার ছেলে শুধু একটু মজা করতে চেয়েছিল, ও কি জানত যে এটাই ওর শেষ মুহূর্ত হবে?”
এই ঘটনার পর স্টেশনের যাত্রীরা, স্থানীয় প্রশাসন সবাই অবাক হয়ে গেল, কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এতটা ভয়াবহ হতে পারে! কিভাবে ভাইরাল হওয়ার ইঁদুরদৌড়ে ছেলেমেয়েরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে!
এই ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা কোনো কিছুর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। জীবনের মূল্য অনেক বেশি, আর সেটাই আমাদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার। তাই আসুন, আমরা দায়িত্ববান হই, নিজে সচেতন থাকি এবং অন্যদেরও সচেতন করি। ভাইরাল হওয়ার জন্য জীবনকে ঝুঁকিতে না ফেলে বরং সৃজনশীল এবং নিরাপদ কনটেন্ট তৈরি করি। কারণ, জীবন একটাই, এবং সেটাই সবচেয়ে মূল্যবান।
বিঃ দ্রঃ – পূর্ব বর্ধমানের ঘটনা অবলম্বনে লেখা এই গল্প।
|| সমাপ্ত ||