ফুলবাড়ি গ্রামের এক কোণে একটি ছোট্ট মাটির বাড়ি। সেই বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে ছিল সন্দীপের রাজত্ব। আট বছরের ছেলেটি সারাক্ষণ নিজের মনেই খেলত। খেলাধুলার জগতে তার সঙ্গী ছিল কখনো প্লাস্টিকের বল, কখনো খেলনা গাড়ি, আর কখনো মায়ের ওড়না। তার মা গোলাপির ওই ওড়নাটা প্রায়ই ব্যবহার করতেন। সন্দীপ মজা করে বলত, “এটা আমার সুপারহিরোর চাদর!”
সেদিনও তেমনই একদিন। স্কুল থেকে ফিরে সন্দীপ নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে খেলতে শুরু করে। তার মা তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত। বাবা গ্রামের বাজারে গিয়েছেন কাজের খোঁজে। সন্দীপের হাতে সেই ওড়নাটা। সে সেটি গলায় পেঁচিয়ে তার কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে গেল। কখনো সে দস্যু রাজা, কখনো সুপারহিরো। কিন্তু তার খেলাটা যে কীভাবে এত বড় একটা বিপদে পরিণত হবে, তা কেউ ভাবেনি।
খেলতে খেলতে একসময় ওড়নাটি ঘরের খাটের পাশে থাকা দড়ির সাথে জড়িয়ে যায়। সেই অবস্থায় ওড়না তার গলায় আটকে যায়। সন্দীপ হয়তো বুঝতে পারেনি যে কল্পনার এই খেলা বাস্তবে তাকে কতটা বিপদে ফেলতে চলেছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তার দম বন্ধ হতে শুরু করে।
মা গোলাপি রান্নাঘর থেকে বার বার তাকে ডাকছিলেন, “সন্দীপ, খাওয়ার সময় হয়েছে!” কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখেন সেই মর্মান্তিক দৃশ্য। সন্দীপ খাটের পাশ থেকে ওড়নায় ঝুলছে। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। সবাই মিলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই সব শেষ। চিকিৎসক জানালেন, সন্দীপ আর নেই।
এলাকার প্রতিফলন
এই ঘটনায় পুরো গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিবেশী অলোক বিশ্বাস বললেন, “খুব ছোট্ট ছেলেটা। নিজের মনে খেলা করত। বুঝতেই পারেনি কীভাবে এত বড় বিপদ ডেকে আনল।”
সচেতনতার শিক্ষা
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আমাদের বড় একটি শিক্ষা দেয়। শিশুরা খেলতে গিয়ে অনেক সময় বিপজ্জনক পরিস্থিতির শিকার হয়, যা আমরা বড়রা খেয়ালই করি না।
সচেতনতার বার্তা:
১. বিপজ্জনক বস্তু সরিয়ে রাখুন: ঘরের দড়ি, ওড়না, ইলেকট্রিক তার ইত্যাদি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
২. শিশুদের পর্যবেক্ষণ করুন: তাদের একা রেখে কোথাও যাবেন না। একা খেলতে গেলে কী করছে, তা লক্ষ্য রাখুন।
৩. প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন: মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহারে সময়সীমা নির্ধারণ করুন।
৪. শিক্ষা দিন: শিশুদের শেখান, কীভাবে খেলতে হবে এবং কোন জিনিসগুলো বিপজ্জনক।
সন্দীপের জীবন হয়তো ফিরিয়ে আনা যাবে না। তবে তার ঘটনা যেন আর কোনো পরিবারের জীবনে না ঘটে, সেটাই আমাদের চেষ্টা। মনে রাখুন, একটি ছোট্ট সতর্কতাই একটি বড় দুর্ঘটনা এড়াতে পারে। শিশুর নিরাপত্তা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
“শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের নিরাপত্তা সবার আগে।”
বিঃ দ্রঃ – নদীয়ার হাঁসখালির ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।
|| সমাপ্ত ||
________