রাজুর মুখে লাজুক হাসি লেগেই থাকত আজকাল। চারদিকে উৎসবের আমেজ—বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের ভিড়, বন্ধুদের হাসি-ঠাট্টা, পাড়ায় আলো ঝলমলে প্যান্ডেল। আর মাত্র তিন দিন, তারপরই নতুন জীবনে পা রাখবে সে। মা, বাবার চোখে আনন্দের জল, বোনেরা খুশিতে আত্মহারা। কিন্তু সবকিছুর মাঝেই রাজু যেন একটু ব্যস্ত, একটু চিন্তিত। বিয়ে বলে কথা—কোথাও যেন কোনো খুঁত না থাকে!
সেই চিন্তাই হয়তো তাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিয়ে গেল আলুর খেতে। জল দেওয়ার ব্যবস্থা ঠিক আছে তো? কোনো সমস্যা হবে না তো? এসব ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে গেল মোটরের দিকে। হালকা শীতের হাওয়া বইছে, দূরে কোথাও বাজছে শানাইয়ের সুর। রাজু বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে বোঝার আগেই এক ভয়ংকর ঝটকা অনুভব করল। মুহূর্তের মধ্যে পুরো শরীর অবশ হয়ে গেল, চোখের সামনে সব ঘোলা হয়ে এল। সে আর কিছু বুঝতে পারল না…
খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। কেউ একজন ছুটে এসে চিৎকার করল, “রাজু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে!” মুহূর্তেই পুরো গ্রাম যেন থমকে গেল। আনন্দের হুল্লোড় থেমে গেল, হাসির জায়গা নিল শূন্যতা। রাজুর মা ছুটে এলেন, “আমার ছেলেটা! কে আমার ছেলেটাকে বাঁচাবে?”
ধূপগুড়ি মহাকুমা হাসপাতালে নেওয়া হলো তাকে। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই সব শেষ… ডাক্তার জানিয়ে দিলেন, রাজু আর নেই।
বাড়িতে তখন প্যান্ডেল ঝুলছে, আলো জ্বলছে। কিন্তু সেই আলোর কোনো অর্থ নেই আর। যে ঘরটায় কনে বসে আসার কথা ছিল, সেখানে কান্নার রোল উঠেছে। শুক্রবার যে দিনটায় সানাই বাজার কথা ছিল, সেদিন বাজবে শোকের সুর।
পাড়ার মানুষজন স্তব্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ ফিসফিস করে বলছে, “ভাগ্য বোধহয় অন্য কিছু লিখে রেখেছিল ওর জন্য…”
অভিশপ্ত সেই সন্ধ্যা বদলে দিলো এক তরতাজা জীবনের গল্প। খুশির বাড়িতে নেমে এল চিরস্থায়ী অন্ধকার।
বিঃ দ্রঃ – ধুপগুড়ির ঘটনা অবলম্বনে লিখিত।
|| সমাপ্ত ||